ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয়?
ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয়?
ব্যথার ওষুধ, বিশেষ করে NSAIDs (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs) যেমন ইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি, পাকস্থলীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকেই জানেন না, ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয়, এবং এটি কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয়?
যদি ব্যথার ওষুধ গ্রহণের সময় গ্যাসের ওষুধ (যেমন প্যান্টোপ্রাজল, ওমিপ্রাজল, রেনিটিডিন) না খাওয়া হয়, তবে নিচের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:
গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল বাড়তে পারে – ব্যথার ওষুধ পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, ফলে অম্বল, বুকজ্বালা, বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে – দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ ছাড়া NSAIDs খেলে পাকস্থলীতে ঘা (ulcer) হতে পারে, যা রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
হজমের সমস্যা হতে পারে – অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির কারণে অস্বস্তি, বমিভাব বা খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে।
পেটে ব্যথা বা ব্লোটিং হতে পারে – অনেক সময় অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফাঁপা ও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
গ্যাসের ট্যাবলেট মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকারক?
গ্যাসের ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
১. অ্যান্টাসিড (Antacids) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেমন: এলুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড, ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট।
দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম শরীরে জমলে পাথর (Kidney Stone) হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।
২. প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) ও H2 ব্লকার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেমন: ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, এসোমিপ্রাজল (PPI), রেনিটিডিন, ফ্যামোটিডিন (H2 ব্লকার)।
পুষ্টির অভাব: দীর্ঘদিন ব্যবহারে ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে, ফলে হাড় দুর্বল (Osteoporosis) হতে পারে।
কিডনি সমস্যার ঝুঁকি: গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন PPI ব্যবহার করলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে পারে।
পাকস্থলীর সংক্রমণ: অ্যাসিড কমে গেলে H. pylori ব্যাকটেরিয়া সহজে বেঁচে থাকতে পারে, যা পেটে আলসার বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
হার্টের সমস্যা: দীর্ঘদিন উচ্চ মাত্রায় গ্যাসের ওষুধ খেলে রক্তনালীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
গ্যাসের ওষুধ সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া জরুরি, যাতে এটি কার্যকর হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।
১. অ্যান্টাসিড (Antacid) খাওয়ার নিয়ম
যেমন: Gelusil, Digene, Rennie, Alumag।
খাবারের ৩০ মিনিট পর বা খাবারের পরপরই খাওয়া ভালো।
বেশি গ্যাস বা অম্বল হলে দিনে ২-৩ বার খাওয়া যেতে পারে।
দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়, বিশেষ করে কিডনি রোগী বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য।
২. প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) খাওয়ার নিয়ম
যেমন: Omeprazole, Pantoprazole, Esomeprazole, Rabeprazole।
খাবারের অন্তত ৩০-৬০ মিনিট আগে খেতে হয়, সাধারণত সকালের নাশতার আগে।
যদি দিনে একবার খেতে হয়, তবে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো।
দীর্ঘদিন খেলে হাড় দুর্বল, ভিটামিন বি১২ কমে যেতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন খাওয়া ঠিক নয়।
৩. H2 ব্লকার খাওয়ার নিয়ম
যেমন: Ranitidine (Zantac), Famotidine (Pepcid)।
রাতে শোয়ার আগে বা খাবারের ৩০ মিনিট আগে খাওয়া ভালো।
দীর্ঘদিন খেলে পাকস্থলীর স্বাভাবিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমে যেতে পারে।
কী করা উচিত?
✔ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। ✔ জরুরি হলে স্বল্পমেয়াদে ব্যবহার করা ভালো। ✔ প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস ও অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত:
চর্বিযুক্ত ও মশলাদার খাবার কমানো।
বেশি পানি পান করা।
খালি পেটে চা-কফি না খাওয়া।
খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া।
উপসংহার
অনেকে জানেন না ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয় এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কী হতে পারে। ব্যথার ওষুধ গ্রহণের সময় গ্যাসের ওষুধ না খেলে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, পেটে ব্যথা ও হজমের সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ খেলে কিডনি, হার্ট, লিভার ও হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ব্যাথার ঔষধের সাথে গ্যাসের ঔষধ না খেলে কি হয়, তা বুঝে সঠিক নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url